রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ১০ মাস পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেয় সরকার। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা আসে। এখন পর্যন্ত অন্য বিভাগের তুলনায় ঢাকায় রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর ৫৫ শতাংশের বেশি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকার পরে আছে চট্টগ্রাম।
ঢাকা বিভাগের করোনায় মৃত্যুর হারের এমন চিত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও রোগতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং সংক্রমণের হার বেশি থাকার কারণে ঢাকায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়া এবং সময়মতো হাসপাতালে না আসার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন কেউ কেউ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ৬৮৭ জনের। এর মধ্যে সর্বোচ্চ চার হাজার ২৩২ জন বা ৫৫.০৫ শতাংশ মারা গেছে ঢাকা বিভাগে। এক হাজার ৪২০ জন বা ১৮.৪৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে, ৫৩৮ জন বা ৭ শতাংশ খুলনায়, ৪৪৩ জন বা ৫.৭৬ শতাংশ রাজশাহীতে, ৩৪৮ জন বা ৪.৫৩ শতাংশ রংপুর বিভাগে, ২৯৪ জন বা ৩.৮২ শতাংশ সিলেটে, ২৩৮ জন বা ৩.১০ শতাংশ বরিশাল বিভাগে ও সর্বনিম্ন ১৭৪ জন বা ২.২৬ শতাংশ ময়মনসিংহ বিভাগে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, বাংলাদেশে ওই দিন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে মোট পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ১৯ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ৫৪ হাজার ৬৬৩ জন। অর্থাৎ মোট শনাক্তের ৬৮.৭৩ শতাংশই এই বিভাগে। অন্যদিকে শনাক্ত রোগীর মধ্যে সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে সাত হাজার ৫৮৬ জন, অর্থাৎ ১.৪৭ শতাংশ।
অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত শুধু ঢাকার দুই সিটিতেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজার ৬২৯ জন, যেখানে সারা দেশে মোট শনাক্ত রোগী পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৮ জন। অর্থাৎ মোট রোগীর ২৯ শতাংশ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে।
রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সারা দেশের হিসাবে শনাক্তের হার কমলেও ঢাকায় কিন্তু শনাক্তের হার এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। শনাক্ত বেশি হলে সংক্রমণ বেশি থাকবে। আর যেখানে সংক্রমণ বেশি থাকবে মৃত্যু সেখানে বেশি ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। সেই হিসেবে ঢাকায় মৃত্যু সব সময় বেশি ছিল এবং এখনো আছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা অনেকের মৃত্যুও ঢাকার মধ্যে যুক্ত হচ্ছে।’
ডা. ফ্লোরা বলেন, সারা দেশের পরিসংখ্যানে শনাক্তের হার ৬ শতাংশে নামলেও এখনো ঢাকায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এটা বিবেচনায় রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে কিন্তু সতর্কতামূলক প্রবণতা খুবই কম। শুরু থেকে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছে তাদের বেশির ভাগেরই বিভিন্ন ধরনের পুরনো রোগের জটিলতা ছিল। অনেকেই হয়তো তা জানতই না। অনেকে বাড়িতে মারা যাওয়ায় তাদের আগে থেকে কী রোগ ছিল না ছিল তা বিস্তারিত হয়তো জানাও যায় না।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আমরা সংক্রমণ বা শনাক্ত পরিস্থিতি নিচের দিকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সব মানুষ যে পরীক্ষা করাতে আসছেন তা নয়।’ তিনি বলছেন, অনেকেই পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অনেকে হয়তো বুঝতেই পারে না যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা জটিলতায় পড়ে যায় তারাই কেবল হাসপাতালে ছোটে। হাসপাতালে যাওয়ার আগে যাদের অবস্থা খারাপ হয় তাদের বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। এদিক থেকে ঢাকায় সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি।
আরেক রোগতত্ত্ববিদ ড. আনোয়ারুল বলেন, ‘আমাদের উপযুক্ত মাত্রায় পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না সঠিক মাত্রায় সংক্রমণটি কোন পর্যায়ে আছে। কিন্তু যেহেতু মৃত্যু সহজেই চোখে পড়ে তাই সংক্রমণের বিষয়টি এখন এক ধরনের আড়ালে চলে গেছে।’
Leave a Reply